Monday, December 1, 2008

১৯৭০ সালের নির্বাচন ও সিইসি’র নগ্ন আওয়ামী প্রীতি

---আরিফুল হোসাইন---

নূতন এক বিতর্ক শুরু হয়েছে বর্তমান সিইসি শামসুল হুদার কিছু মন্তব্য থেকে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রসাশকদের সম্মেললে তিনি বলেছেন, তিনি ১৯৭০ সালের মত একটি নির্বাচন করতে চান। এ নিয়ে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের থেকে নানা রকম মন্তব্য এসেছে। আজ আমরা আমাদের কিছু তথ্যভিত্তিক মন্তব্য জাতির বিবেচনার জন্য পেশ করতে চাই।

১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের দীর্ঘ ১২ বছরের আন্দোলনের ফসল। ১৯৫৮সালে আইয়ুব খানের মতা দখলের পর থেকে জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ সহ ৮দলীয় জোট ডেমোক্রেটিক আøকশান কমিঠি (ডাক) এর তুমুল যৌথ আন্দোলনের কারণে ১৯৬৮সালে আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে রাজী হন। আইয়ুব খানের পদত্যাগের ঘোষণার কারণে আন্দোলনরত সকল দলের যৌথ ঘোষণা তৈরীর উদ্দেশ্য লাহোরে অনুষ্টিত গোলটেবিল বৈঠক আওয়ামী লীগের বিশেষ করে শেখ মুজিবের একগুয়েমি ও অযৌক্তিক কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরফলে শেখ মুজিব আবারো আইয়ুব খানের ফাঁদে পা দেন এবং দীর্ঘ ১২ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেন। এভাবে আবারো ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন জাতির বুকের উপর চেপে বসে। একথাও সকলের জানা আছে, আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারির পেছনেও আওয়ামী লীগের উগ্র ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতিই দায়ী ছিল। ততকালীন পাকিস্থানের ডেপুটি স্পীকার শাহেদ আলীকে পার্লামেন্টে স্পীকারের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা হত্যা করে এবং আইয়ুব খান এটাকেই অজুহাত হিসেবে নিয়ে সামরিক শাসন জারী করেন। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামবিক শাসন জারীর পিছনেও আওয়ামী লীগ সরাসরি সমর্থন দিয়েছিল। ঠিক একই ভাবে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে প্রকাশ্য রাজপথে নিরীহ মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা করে সেই লাশের উপর নৃত্য করার মত নৃশংস কাজের মাধ্যমে আবারো বাংলাদেশে বিশেষ ধরনের এক সামরিক শাসন জাতির উপর চেপে বসে। আওয়ামী লীগের নৃশংস রাজনীতির কারণে জাতি আজ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে ২২বছর পিছিয়ে পড়েছে।
বলছিলাম ১৯৭০ সালে যে নির্বাচনের কথা, ১৯৭০ সালে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল? ঐ নির্বাচন যারা দেখেছে তারা সকলেই অবগত, ঐ সময় আওয়ামী লীগের ফ্যাসিষ্ট রাজনীাতর কারণে ততকালীন পূর্ব পাকিস্থানে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোন দলই ঠিকে থাকতে পারেনি। আওয়ামী মতাদর্শ বিরোধী কোন রাজনৈতিক দল বা নেতাকে সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাণাও চালাতে দেয়নি। যেমন ১৯৭০ সালে পল্টন ময়দানে জামায়াতের নির্বাচনী সমাবেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলা। ঠিক একই ভাবে ২০০৬ সালে ঠিক পল্টন ময়দানেই জামায়াতের সমাবেশের উপর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা বাহিনীর নগ্ন হামলা। শুধু হামলা করেই থামেনি। আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা প্রকাশ্য রাজপথে নিরীহ মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা করে সেই লাশের উপর নৃত্য করার মত বর্বর ও ঘৃন্য কাজও করেছে। আওয়ামী লীগের এ সমস্ত বর্বর কাজকেও তথাকথিত সুশীল নামধারী পরভোজীরা সমর্থন করে থাকেন। আওয়ামী লীগের এ সমস্ত কাজ যারা সমর্থন করছে তারা কি মানুষ? না আওয়ামী লীগ মানুষ নামের বর্বর ও অসভ্য কোন জীব?

১৯৭০ সালের নির্বাচন যারা দেখেছে, তারা সকলে জানে সেই নির্বাচনে বেশুমার এবং বাধাহীন ভাবে আওয়ামী লীগের বাক্সে জাল ভোট পড়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে কোন দল ঠিকভাবে ভোট কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট পাঠাতে পারেনি। এখন বর্তমান সিইসি যদি সেই নির্বাচনকে আদর্শ হিসেবে নেন তাহলে বলতে হয়, এত নগ্নভাবে দলবাজি এরকম একটি চেয়ারে বসে করা জাতির জন্য সমস্যা ডেকে আনবে। আমাদের পরভোজী সুশীলদের এই সিইসির বিরুদ্ধে কোন রকম মন্তব্য করতে দেখিনা। সাবেক সিইসি বিচারপতি আজিজের পান থেকে চুন খসলেই হাজারো খড়গ নেমে আসত, আজ শামসুল হুদা সাহেবের নগ্ন দলবাজীর বিরুদ্ধে সুশীলদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়না। এবকম পরভোজীরাই আবার আমাদের রাজনীতির সবক দিতে আসে। বাংলাদেশে বিগত ৩টি নির্বাচনকে সবাই গ্রহন করে নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বর্তমান সিইসি শামসুল হুদা সাহেবের দৃষ্টিতে এগুলো কোনো সঠিক নির্বাচন নয়। বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচন। আমাদের বুঝে আসেনা এত পার্টিজান ব্যাক্তি কি করে একটি সঠিক নির্বাচন দিতে পারবে? আমাদের তথাকথিত সুশীল সমাজের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, কি অপরাধ করেছিল বিচারপতি আজিজ? তিনি কি হুদা সাহেবের মত এত নগ্নভাবে কোন দলের হয়ে কথা বলেছিল? আপনাদের সেই বিবেকবোধ আজ কথা বলেনা কেন?
এখন আমরা আরো কিছু প্রশ্ন করতে চাই, যে ৬ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে নির্বাচন করেছিল সে দফার মধ্যে কি ছিল? সেখানে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোন কথা ছিল? সেই নির্বাচন বিজয়ী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন? পাকিস্থানের না বাংলাদেশের? যদি ইয়াহিয়া এবং ভূট্টো ষড়যন্ত্র না করে যথাসময়ে শেখ মুজিবের হাতে মতা হস্তান্তর করত তখন মুক্তিযুদ্ধের কথা আসত কিনা? ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত মধ্য রাত পর্যন্ত শেখ মুজিব সহ আওয়ামী লীগের নেতারা ইয়াহিয়ার সাথে কি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? মতা পাওয়ার জন্য না স্বাধীনতার জন্য? কিসের অপোয় শেখ মুজিব ছিলেন? যদি স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ নেতাদের টার্গেট থাকত তবে কি প্রস্তুতি তারা নিয়েছিলেন? ১৯৭০ সাল থেকে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য বা গোপন কোন মিটিংয়ে কি স্বাধীনতার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কে কোথায় ছিলেন? কয়জন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী স্বাধীনতা যুদ্ধে মারা গিয়েছিল?

স্বাধীনতা যুদ্ধ আসলে জহির রায়হানের ভাষায় সময়ের প্রয়োজনে সংগঠিত হয়েছিল। কোন নেতার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়নি। তাই অযথা বিভক্তি তৈরী না করে সবাই মিলে দেশটাকে গড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের উপর সম্রাজ্যবাদীদের কু-দৃষ্টি পড়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে বাচানোর জন্য সবাইকে দেশপ্রেমিক শক্তিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

No comments: