Friday, December 5, 2008

জনগণই যদি দুর্নীতি দমন করবেন তাহলে দু’বছরে এতো ঘটনা ঘটানো হলো কেন?

---আরিফুল হোসাইন---

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, টিআইবি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করা এবং দুর্নীতি দমন সবই নির্ভর করছে জনগণের ওপর। সরকারের মুখপাত্র, বাণিজ্য উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা জনগণের দায়িত্ব। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকে) চেয়ারম্যান হাসান মশহুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে দুর্নীতি দমন করা যাবে না। টিআইবি’র চেয়ারম্যান বলেছেন- জনগণকে সোচার হতে হবে।
দুর্নীতি দমনের নামে গত দুই বছরে দেশে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে জেলে ঢোকানো হয়। প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায় ৪৩৫টি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। ৮৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ আদালতে। ১২১টি মামলার তদন্ত করে দেখা গেছে যে, এসব মামলার চার্জ গঠন করার মতো ন্যূনতম কোনো আলামতও অভিযোগের মধ্যে নেই। অর্থাৎ এসব মামলার কোনো ভিত্তি নেই। গত দুই বছরে কম করে হলেও আড়াইশ শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে জনগণের সামনে তাদেরকে দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করা হয়। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি।
গত দুই বছরে কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের মূল টার্গেট ছিল মূলত রাজনীতিবিদরা। ঢালাওভাবে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা এবং তাদের জেলে পর্যন্ত নেয়া হয়। দুর্নীতির মামলা দিয়ে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জেলে পাঠিয়ে রাজনৈতিক শূন্যতা, তৃতীয় রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টি, শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ‘মাইনাস’ করা সহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
দুর্নীতি দমন করতে গিয়ে গত দু’বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। থমকে গেছে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন, বাণিজ্যিক খাতেও ধস নেমেছে। নতুন করে লাখ লাখ যোগ্য ব্যক্তি বেকার হয়েছে। দুর্নীতি দমনের নামে হত-দরিদ্র ভাসমান, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীসহ ১৪ লাখ লোককে উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযান গেছে ঐসব নিরীহ অসহায় মানুষের ওপর দিয়ে। দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, জরুরি অবস্থা জারি করে চালানো হয়েছে ঢালাও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান।
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার টিআইবি। আর টিআইবি বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার কথা বলে যাচ্ছে। টিআইবি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, গত দু’বছরে দুর্নীতি কমেনি। টিআইবি’র সর্বশেষ জরিপে বলা হয়- সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বেড়েছে। দুর্নীতির শীর্ষে পুলিশ, এলজিইডি, এডুকেশন, যোগাযোগসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং উল্টো দুর্নীতিবাজ আমলাদের বাচাঁনোর চেষ্টা করা হয়েছে।
দুই বছর পর এসে বলা হচ্ছে যে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। জনগণই উদ্যোগ নেবে। তাহলে গত দু’বছরে কেন দেশের এই সর্বনাশ করা হলো? জনগণের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি কেন বাধাগ্রস্ত করা হলো? এই প্রশ্ন সচেতন নাগরিক সমাজের।

--সংগৃহীত

No comments: