Friday, May 14, 2010

শেখ মুজিব বিভেদের যে ইস্যুকে শেষ করে গেছেন, ভারত শেখ হাসিনা সরকারকে দিয়ে সেই ইস্যু উস্কে দিচ্ছে

১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে স্বয়ং শেখ মুজিব তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সদস্যকে চূড়ান্তভাবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে চিহ্নিত করা হলেও তার আলোকে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি (শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ১৪ দিনের মাথায়) দালালদের দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে ভাষণ শেষে শেখ মুজিব নিজ গৃহে যাবার আগেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি পাকিস্তানী সেনাসদস্যদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে যান। শেখ মুজিবের এই ভূমিকায় ভারত সরকার ও ঢাকায় অবস্থানরত ভারতীয় সেনা কমান্ড যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, তদন্তের মাধ্যমে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর মধ্য থেকে ১৯৫ জনকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল তিনের লংঘন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটের অপরাধে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের জন্য চিহ্নিত করা হয়। ১৯৭৩এর ৮জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ইতোপূর্বে তালিকাভুক্ত পাক যুদ্ধাপরাধীদের সংখ্যা ১২০০ থেকে কমে ১৯৫ জন হয়েছে। এই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবেই।' তবে ভারতীয় সূত্র মতে, সরকার শেষ পর্যন্ত ১৯৫ জনের জায়গায় ১৮৫ জনের তালিকা চূড়ান্ত করে বলে জানা যায়। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে পাক যুদ্ধাপরাধীদের forget and forgive-এর অংশ হিসেবে ক্ষমা করে বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যুগপৎভাবে এর ছয়মাস একুশ দিন পর ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর বাংলাদেশের ভেতরের যারা রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ছাড়া অন্যান্য ছোটখাট অপরাধ করেছিল তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের তালিকাভুক্ত ও বিচার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অতীতের সমস্ত গ্লানি ভুলিয়া গিয়া পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য আমরা কোন উদ্যোগ বাদ দেইনি এবং সর্বশেষ ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা ঘোষণা করিয়া আমরা চূড়ান্ত অবদান রাখিয়াছি। ঐ সকল যুদ্ধবন্দি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মারাত্মক অপরাধ করিয়াছে। ইহা হইতেছে নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং উপমহাদেশে ভবিষ্যৎ শান্তি ও স্থায়িত্ব গড়িয়া তোলার পথে আমাদের অবদান। ‘‘এরপর ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে আবারও বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা আমরা করেছি, এমনকি মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধের জন্য যাদের বিচার হওয়ার কথা ছিল, সে সব যুদ্ধাপরাধীরও আমরা মার্জনা দিয়েছি। বাংলার মানুষের বদান্যতা ও ঔদার্য ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’’ শেখু মুজিব যে পদক্ষেপকে জাতীয় সংহতির প্রতীক বলেছেন, যে পদক্ষেপকে তিনি বলেছেন বদান্যতা, সে পদক্ষেপই হয়েছে ভারতের জন্যে অসহনীয় বেদনার কারণ। শেখ মুজিব যে বিচারকে শেষ করেছিলেন তাকেই ভারতীয় মিডিয়ায় এখন অসমাপ্ত কাজ বলছে এবং চাচ্ছে শেখ হাসিনা তা শেষ করুক। অর্থাৎ শেখ মুজিব যা শেষ করেছেন, ভারত শেখ হাসিনা সরকারকে তা আবার শুরু করাতে চাচ্ছে। চাচ্ছে কারণ বাংলাদেশে অব্যাহত দ্বনদ্ব সংঘাতই ভারতের কাম্য।
রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিবের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার একটি দলের কতিপয় শীর্ষ নেতাদের জব্দ করার জন্য যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীর বিচার চালু করেছে। এখানেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সরকারের বিতর্কিত ও বিভেদাত্মক সিদ্ধান্তের কুফল নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ন'মাসে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করার বহু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। তাছাড়া একাত্তরের ভূমিকার জন্য শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর কতিপয় নেতাদের টার্গেট করা এবং বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালে তাদের চরিত্রহননের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুধু ন্যায় বিচারের পরিপন্থীই নয়, চূড়ান্ত বিচারে এটাই মানবতার সাথে বিদ্রূপ।
১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর বাংলাদেশ পাকিস্তান তথা মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসর্ম্পক পুনর্বহাল করে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে যে বলিষ্ঠ ও বাস্তববাদী ভূমিকা পালন করেছে, ভারত তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। উপমহাদেশের দুই প্রান্তে ভারতের দুদিকে
মুসলিম প্রধান দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রশক্তির বাস্তবতা কার্যত ভারতের মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দেয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে শেখ মুজিব ঢাকায় তার প্রথম জনসভায়ই বাংলাদেশের রাষ্ট্রচরিত্র নির্ধারণ করতে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশ বিশ্বের ‘দ্বিতীয় বৃহত্তম' মুসলিম দেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে শেখ মুজিব যোগ দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির রূপরেখা স্পষ্ট করেন। শেখ মুজিবের এই সিদ্ধান্ত যাতে কার্যকর করা না হয়, নয়াদিল্লী বিশেষ করে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে তাতে ভূমিকা রেখেও ব্যর্থ হন। এছাড়া পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ঢাকায় মুজিব সরকারের লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়ায় ভারত যারপরণাই ক্ষুব্ধ হয়। ভাতের তদানীন্তন হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিমান বন্দরে হাত মিলাতে চাননি বলে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যান। এসব ঘটনাপ্রবাহ ভারতের সাথে মুজিব সরকারের সম্পর্ক নিয়ে যখন টানাপড়েন চলছে, তখন দালাল আইনের আওতায় যে সব বাংলাদেশী ভিন্নমতের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিচারের প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রেখে শেখ মুজিব ‘বদান্যতা ও ঔদার্য, দেখিয়ে ‘‘সাধারণ ক্ষমা’’ ঘোষণা করে ইতিহাস তৈরি করেন, ভারত তাকেও সমর্থন করতে পারেনি। বিশেষকরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করলেও বিজয়ের পর দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার লক্ষ্যে শেখ মুজিব সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্র নায়কসুলভ বিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন, তাকে আজ ইতিহাসের কাঠগড়ায় এনে পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ এর ন'মাস যারা খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটন করেছে, যে কোন আইনেই তাদের বিচার হতে পারে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ-বাকশাল শাসনের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম পর্বের পুরো পাঁচবছর তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের কোনা উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সমীকরণে জামায়াতে ইসলামী যখন একটি ঋণাত্মক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি বিবেচনায় রেখে ভারত তার তাঁবেদার সরকার ও তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে ‘‘জামায়াত বধ' এর লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের মহাতোড়জোর চালাচ্ছে। বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে জামায়াত সহ ইসলামী শক্তির জোটবদ্ধতা হলে নির্বাচনী রাজনীতির সমীকরণ হয় একরকম, আর ইসলামী শক্তি জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ ত্যাগ করে ভিন্ন অবস্থান নিলে তার সমীকরণটা ভারতের পক্ষে থাকে। ভারতীয় তাত্ত্বিকরা রাজনীতির এই সরল সমীকরণকে সামনে রেখে জামায়াত নির্মূলের টার্গেট নিয়েছে। এর পাশাপাশি ১৯৭১'-৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিব ভারতের বৃত্তের বাইরে এসে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে যে স্বকীয় এবং ঐক্যমুখী অবস্থান নিয়েছিলেন, তাতে ভারত চরমভাবে বিব্রত, হতাশা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা মনে করেন। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধীদের বিচারের নামে ভারত বিরোধী সংগঠিত ও অগ্রসর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে চিহ্নিত করে বিচারের নামে ক্রুসেড শুরু করা হয়েছে। এমনকি জামায়াত তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, ‘‘মৌলবাদী’’ অর্থনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ দখলের নামে জামায়াতের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংসের প্রোপাগান্ডা এর সাথে যুক্ত।
এই প্রাপাগান্ডার ধারাবাহিকতায় ভারতের ‘দি হিন্দ' পত্রিকায় সাম্প্রতিক তথ্য সন্ত্রাসের সংযোজন। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন বাংলাদেশী কোন সিভিলিয়ান নাগরিকের ব্যাপারে বিচারে প্রযোজ্য হতে পারে না। অতীতে শেখ মুজিবের আমল থেকে আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ ‘যুদ্ধাপরাধী' হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে উল্লেখ করেননি। জামায়াতকে যারা সমালোচনা করে এসেছেন, তারা একাত্তরের ‘স্বাধীনতা বিরোধী' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম সত্তা স্বীকার করে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায় আত্মস্থ করে বাংলাদেশের সপক্ষ শক্তি হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। দ্বিতীয়ত: দালাল আইনের সূত্রে কথিত অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় এদের আর দ্বিতীয়বার বিচার করার নৈতিক ও আইনগত কোন বৈধতা থাকতে পারে না। যে সব সুনির্দিষ্ট অপরাধের বিচার শেখ মুজিবও জারি রেখেছেন, জামায়াতের কোন নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে দেশের কোথাও তার একটিরও প্রমাণ বা মামলা নেই।
‘আন্তর্জাতিক' আইন কখনো অভ্যন্তরীণ নাগরিকদের বিচারের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে টার্গেটভুক্তদের নির্মূল করার জন্য আইনের অপব্যাখ্যা এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। ইন্ডিয়ান প্রোপাগান্ডিস্টরা রাষ্ট্রের স্থপতির দ্বারা নিত্তিকৃত একটি মীমাংসিত ও মৃত ইস্যুকে তাদের নিজেদের স্বার্থেই চাঙ্গা করেছেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একাত্তরের রাজনৈতিক বিভক্তি-রেখা অতিক্রম করে জাতি চারদশক ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যকে বিভক্ত করার জন্য ভারতীয় থিংকট্যাংক তাদের স্থানীয় ভাড়াটেদের হাতে গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আত্মঘাতী অস্ত্রটি তুলে দিয়েছে। বাংলাদেশে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রোপাগান্ডাধর্মী লেখায় নিয়োজিত, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক হারুন হাবীব তাদের অন্যতম। দেখা যাচ্ছে, ‘দি হিন্দু' তাকে উদ্ধৃত করে তথ্য সন্ত্রাসের জামায়াত বিরোধী কাহিনী সাজিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের করণীয় যখন ভারতীয় মিডিয়ার মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায়, তখন বুঝতে হবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটি সরকারের নিজস্ব উদ্ভাবন বা মূল এজেন্ডা নয়। এটাকে সীমান্তের ওপার থেকে খুঁচিয়ে তাজা করা হচ্ছে। তার নমুনা অহরহ পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে জনমত তৈরিতে নিবেদিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন.......in the past to make holding war crime trails on issue that can bring the Awami League to Power. We did it. We belive we achieved and important part of task.... we will continue to raise the issues untill the trail ends and the prepetrators are punished. (New AGE, 13 May, 2010). অর্থাৎ মুনতাসীর মামুনরা দাবি করছেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তারা জনমত গঠন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছেন। তাদের সাথে ছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার বিষয়টিকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে ভারতের পক্ষে তৎপর একটি ‘পঞ্চম বাহিনীর' ভূমিকাই মুখ্য। এরা না আওয়ামী লীগের বন্ধু, না বাংলাদেশের সুহৃদ ও শুভাকাঙ্ক্ষী। মুনতাসীর মামুনও তাই আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন : "A section of the ministers were visibly annoyed with shahriar Kabir and me; some of them, in fact, asked, "Should the government operate at this diktats of Ekattarer Ghatak Dalal Nirmul Committee" (a citizens platform against war criminals.)?
মুনতাসীর মামুন সরকারের ভেতরের একটি অংশের বিরুদ্ধে বিচারের নামে জামায়াতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা উসুলেরও অভিযোগ তুলেছেন। দেখা যাচ্ছে, যারা নেপথ্য থেকে সরকারকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জটিল ইস্যুটি নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য করেছে, তাদের ডিক্টেশন ও প্রত্যাশা মতো সরকার তাল মিলাতে না পারায় তারা সরকারের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে। এর ফলে ঐ গোষ্ঠীটির সাথে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে। আর বাড়ছে বলেই সরকারের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ভারতীয় তাত্ত্বিকরা একই ইস্যুতে তাদের দেশের মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন সন্ত্রাসের ফ্রন্ট খুলেছে। এতে অবশ্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের নেপথ্য শক্তির মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে এবং সরকারের রাজনৈতিক অভিসন্ধি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ফলে বিচারিক প্রক্রিয়া আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ‘দি হিন্দু'র নিবন্ধে প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং '৭৫-এর পটপরিবর্তনকে যুদ্ধাপরাধী বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী করেছে। যা ইতিহাসের বিকৃত উপস্থাপন। কেননা, যুদ্ধাপরাধী ও ‘দালাল-কলাবরেটরদের বিচারের অধ্যায় শেখ মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত করে গেছেন। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের অব্যাহতি দান, দুটোই শেখ মুজিবের অবদান। প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু অকার্যকর দালাল আইন তুলে দিয়ে জাতীয় বিভক্তি রেখা মুছে দিতে চেয়েছেন। ভারতীয় ‘দি হিন্দু' পত্রিকার পুরোলেখায়ই দুটো টার্গেট। এক. প্রেসিডেন্ট জিয়া। দুই. জামায়াতে ইসলামী। অর্থাৎ তদন্ত, প্রসিকিউশন ও বিচারের আগেই তথাকথিত তালিকাভুক্ত জামায়াত নেতাদের ধরে ফাঁসিয়ে দেবার লক্ষ্যে পত্রিকাটি তাদের এ দেশীয় দালাল-পঞ্চম বাহিনীর মতোই প্রোপাগান্ডা ও ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছে। একাত্তরের ‘কালপ্রিট' কারা, তা-ও ভারত নির্ধারণ করে দিতে চায়। নেতাজী সুভাষ বোসও স্বাধীনতা যুদ্ধে কংগ্রেসের বিপরীতে জাপান-জার্মান অক্ষশক্তির পক্ষে ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাই বলে তাকে ও তাঁর সহযোগীদের স্বাধীনতা বিরোধী বলে কেউ বিচার করেনি।

No comments: