Tuesday, March 23, 2010

মন্ত্রীদের অসংলগ্ন কথাবার্তা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার

আওয়ামী লীগ জামায়াতকে এখন তার মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে মনে করে প্রতিপক্ষ হবার মধ্যে খারাপ কিছু আছে বলে আমি মনে করি না তবে এই প্রতিপক্ষ গণ্য করে কেউ যদি কাউকে নির্মূল-নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় তখনি আপত্তি উঠে প্রতিপক্ষ তখন শত্রুতে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ জামায়াতকে শত্রু বলেও গণ্য করে জামায়াত-শিবিরের সাথে বৈবাহিক আত্মীয়তার সম্পর্ক না করার জন্য তারা দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছে জামায়াতের ব্যাপারে মন্ত্রী-মিনিস্টার অসংলগ্ন কথাবার্তা এবং হিংসাত্মক তৎপরতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দেশব্যাপী উদ্বেগেরও সৃষ্টি করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে তারা জামায়াত নেতাদের বিচারের প্রহসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় কিন্তু এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি সকলেই কামনা করেন কিন্তু যুদ্ধাপরাধের নামে দল বিশেষকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা কারুর কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না
আইনমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার নয় তারা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করবেন তিনি আরো বলেছেন যে, তদন্তে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না তার প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, মাওলানা নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ এবং মাওলানা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী আওয়ামী লীগ জেনারেল সেক্রেটারি ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছেন যে, যুদ্ধাপরাধী বিচার হবে প্রতীকী অন্যদিকে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কর্মকর্তারা বলছেন যে, জামায়াতের ২০/২৫ জন নেতার বিচার হলেই যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়ে যাবে এখানে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, জামায়াতই তাদের মূল টার্গেট, যুদ্ধাপরাধের বিচার নয় তদন্ত, অপরাধী চিহ্নিতকরণ এবং বিচারের আগে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ফাঁসি দেয়ার ঘোষণা এটাই প্রমাণ করে যে, তারা বিচারক নিয়োগ ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই রায় প্রস্তুত করে রেখেছেন বিচারক স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন মাত্র
আমার মনে হয়, দলীয় মেনিফেস্টোতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সরকারের বেশির ভাগ কর্মকর্তারই যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা ও তাৎপর্য সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই
আমি এর আগে এই স্তম্ভে একাধিকবার বলেছি যে সারা দুনিয়ায় সার্বজনীনভাবে যুদ্ধাপরাধীদের যে সংজ্ঞা গৃহীত হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের যুদ্ধাপরাধের সাথে সম্পৃক্ত করে বিচার করার কোনও সুযোগ নেই এই সংজ্ঞা অনুযায়ী War Crimes are violations of laws or Customs of war, Lncluding, murder, the illtreatment or deportation of civilian residents of an occupied territory to slave labour camps "the murder and ill-treatment of Prisoners of War, the Killing of hostages the wanton destruction of cities, towns and villages and any destruction not justified by military or civilian necessity অর্থাৎ যুদ্ধরত জাতি ও রাষ্ট্র কর্তৃক যুদ্ধের আইন, বিধি বিধান ও রীতিনীতি লংঘন করাই হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ এর মধ্যে অধিকৃত ভূখন্ডের বাসিন্দাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন কিংবা তাদেরকে দাস হিসেবে শ্রম শিবিরে যেতে বাধ্য করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তদুপরি যুদ্ধবন্দিদের হত্যা অথবা তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ, জিম্মিদের হত্যা করা, শহর নগর ও গ্রাম ধ্বংস করা এবং সামরিক বা বেসামরিক প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও যে কোনও ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালানোও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়
বলা বাহুল্য নূরেমবার্গ ট্রায়ালস এর উদ্যোগে লন্ডন চার্টারে বর্ণিত সংজ্ঞার ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধের আধুনিক ধারণাকে আরো সম্প্রসারিত করা হয়েছে ১৯৪৫ সালের ৮ আগস্ট লন্ডন চার্টার প্রকাশিত হয় এতে যুদ্ধাপরাধের উপরোক্ত সংজ্ঞা ছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে সম্পাদিত অপরাধকেও সংজ্ঞায়িত করা হয় যা যুদ্ধাপরাধের সাথেই করা হয়ে থাকে হেগ-৪ এর ২২ নং অনুচ্ছেদে (Laws of War: Laws and Customs of War on Law (Hague iv): October 18, 1907) বলা হয়েছে "The right of belligerents to adopt means of injuring the enemy is not unlimited." এখানে শত্রুকে আঘাত করার ব্যাপারে যুদ্ধরত দেশগুলোর যে সীমাহীন অধিকার নেই সে সম্পর্কে সতর্ক বাণী রয়েছে যুদ্ধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহে এগুলোর স্বীকৃতি রয়েছে এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহ এগুলো মেনে চলতে বাধ্য গণহত্যাও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের একটি দৃষ্টান্ত যদি International Humanitarian Law এই অপরাধকে Crime against Humanity বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে International Humanitarian Law তে যুদ্ধাপরাধ একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় কেন না এর ওপর ভিত্তি করেই নুরেমবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালের ন্যায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে জাতিসংঘ চার্টারের অষ্টম অধ্যায়ের অধীনে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক সাবেক যুগোশ্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার জন্য International Criminal Tribunal প্রতিষ্ঠা এ প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন :
জার্মানীর এডমিরাল কার্ল ডনিজ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনী প্রধান যথাক্রমে হাইডেক তোজো এবং কুনিয়াকি কইজো
সাবেক যুগোশ্লাভ প্রেসিডেন্ট শ্লোভেদান মিলোসেভিক
লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস জি টেলর
বসনিয়ার সাবেক সার্ব প্রেসিডেন্ট রাদোভান কারাজিক
সুদানের বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান ওমর আল বশির, ‘জনাব বশিরের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এছাড়াও অপরাপর উল্লেখযোগ্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেনঃ
জাপানী সেনা বাহিনীর দু'জন জেনারেল, সাদা ও আবাকি এবং ইওসিজিরো উমেজু
জাপানের যুদ্ধমন্ত্রী শিশিরো ইটাগাকি
জার্মান বিমান বাহিনী প্রধান হারমান গোরিং (Commander in chief of the Luftwaffe)
আর্নষ্ট কেলটেনব্রুনার ও এডলফ আইকম্যান, এরা উভয়েই SS বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন
জেনারেল ম্ল্যডিক, বসনীয় মুসলমানদের মধ্যে গণহত্যা পরিচালনাসহ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বহু অভিযোগ রয়েছে
জেনারেল ফিল্ড মার্শাল ওয়াইহেম কাইটেল
এডমিরাল জেনারেল এরিখ রাইডার
জাপানের প্রিভিসীলের লর্ডকীপার কইচি কিডো
উপরে আমি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের যে তালিকা উল্লেখ করেছি তার মধ্যে বেসামরিক কোনও ব্যক্তির নাম নেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের সূচনা থেকে শুরু করে দুনিয়ার কোনও দেশে সংজ্ঞায়িত যুদ্ধরত পক্ষসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন বেসামরিক কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, এমন নজির নেই আবার এমন নজিরও নেই যে যুদ্ধাপরাধের জন্য কোনও দেশেও যুদ্ধের অব্যবহিত পর চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিচারের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারের উদ্যোগ নিয়ে যুদ্ধরত তিনটি পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে ক্ষমা করে ছেড়ে দিয়েছে এটা একমাত্র বাংলাদেশেই হয়েছে আবার এখন প্রায় চল্লিশ বছর পর মূল যুদ্ধাপরাধীদের বাদ দিয়ে বেসামরিক রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কাল্পনিক অভিযোগ আনার বিষয়টিও একটি অনন্য ঘটনা এবং তাও বাংলাদেশেই ঘটছে ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধ দেখেছেন, রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন, ভুক্তভোগী ছিলেন, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স এখন ৬০-এর উপরে অনেকে মারা গেছেন, অনেকে আবার স্মৃতিভ্রষ্টতায় ভুগছেন এই অবস্থায় এখন যুদ্ধাপরাধী খোঁজার জন্য তদন্ত টিম গঠন ও বিচারের আয়োজনকে অনেকেই নির্মম প্রহসন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপকৌশল বলে মনে করেন
আমি উপরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা ও যুদ্ধাপরাধের একটি তালিকা দেয়ার চেষ্টা করেছি এই অপরাধগুলোর মধ্যে যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য The International Crimes Tribunal Act 1973 (Act No XIX of 1973) নামে একটি আইন করেছিলেন এই আইনেও যে অপরাধগুলোকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিচারের কথা বলা হয়েছিল তার সাথে আন্তর্জাতিক আইনে সংজ্ঞায়িত ও বিবেচিত যুদ্ধাপরাধের খুব একটা গড়মিল দেখা যায় না, যদিও সাক্ষ্য- প্রমাণ, বিচার প্রক্রিয়া এবং অভিযুক্তদের মৌলিক নাগরিক অধিকার এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যাপারে এই আইনে বিধৃত অনেকগুলো বিষয়ই বিতর্কিত ও আইনের দৃষ্টিতে দুর্বল এবং এ প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশনের তরফ থেকে সম্প্রতি এই আইনে ১৭টি সংশোধনী আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই আইনের অধীনে গঠিতব্য ট্রাইব্যুনালের জুরিসডিকশন বা অধিক্ষেত্র হিসেবে যা বলা হয়েছে আমার দৃষ্টিতে তা অযৌক্তিক মনে হয়নি এতে বলা হয়েছে,
"A Tribunal shall have the power to try and punish any person irrespective of his nationality, who being a member of any armed, defence or auxiliary forces commits or has committed in the tersetory of Bangladesh whether before or after the Commencement of this Act any of the following crimes....এখানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধীদের পরিচয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার বলে আমি মনে করি আইনের এই অনুচ্ছেদটিতে যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং সহযোগী বাহিনীর সদসদের মধ্যে তাদের সীমিত করে দেয়া হয়েছে সহযোগী বা auixiliary force এরও এখানে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলা হয়েছে auxiliary forces includes forces placed under the control of the Armed forces for operational administative static and other Purposes. এই বিষয়টি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সম্পাদিত পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিলে আরো পরিষ্কার হয়েছে এই দলিলে বলা হয়েছে,
"The Pakistan Eastern command agree to Surrender all Pakistan Armed forces in Bangladesh to lieutenant-General Gagjit Singh Aurora General officer commanding in chief of the India and Bangladesh forces in the Eastern Theatre. This Surrender includes all Pakistan land, air and naval forces as also all Paramilitary forces and civil armed forces.
মুক্তিযুদ্ধের সাথে তিনটি শক্তি জড়িত ছিল, ভারতীয় বাহিনী, পাকিস্তানী বাহিনী এবং বাংলাদেশ বাহিনী ভারত এবং বাংলাদেশ মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তখন যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়েছিল এই যৌথ কমান্ডের কাছেই পাকিস্তানের স্থল বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনী তথা আনসার ও রাজাকার বাহিনী আত্মসমর্পন করেছিল এরাই ছিলেন যুদ্ধের অংশীদার, অস্ত্রধারী বাংলাদেশের কোনও বেসামরিক লোক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী দলীয় পরিচয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেননি এবং এ প্রেক্ষিতে সারেন্ডার দলিলে তাদের নামও আসেনি ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী একটি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল ছিল ক্ষমতাসীন দল হিসেবে মুসলিম লীগই ছিল অন্যতম বৃহত্তম দল এর আবার তিনটি উপদল ছিল : কাউন্সিল লীগ, কনভেনশান লীগ ও কাইয়ুম লীগ, এরা প্রত্যেকেই রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল একইভাবে নেজামে ইসলাম পার্টি, পিডিপি, পিপলস পার্টি, কম্যুনিস্ট পার্টি, ওলামায়ে ইসলাম, কেএসপি ন্যাপ প্রভৃতি দলও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করেছে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বর্তমানে অপরাপর দলগুলোর অবস্থান নিবু নিবু, জামায়াত তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তিশালী একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তার এই অবস্থান এবং আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও নববই এর দশকের পর জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি তার সমর্থন আওয়ামী লীগের অবস্থানকে দুর্বল করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন আবার জামায়াতের আধিপত্যবাদ বিরোধী ভূমিকায় একটি প্রতিবেশী দেশও অত্যন্ত নাখোশ এই অবস্থায় রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই জামায়াতকে ধ্বংস করার জন্যই তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের বিরোধিতাকারী অন্যকোন দল নয়, শুধুমাত্র জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকাকালে পাকিস্তানের চিহ্নিত সামরিক যুদ্ধ অপরাধীদের ক্ষমা করে দেশে ফেরৎ পাঠিয়েছিলেন তারা বন্দী ছিল তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের এক বছরের মধ্যেই অপরাধের ফিরিস্তি তৈরী হয়েছিল কিন্তু অনুকম্পা নিয়ে তারা ফেরৎ গেছেন একইভাবে যারা রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন তাদেরও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল রাজাকার, আল বদরের সদস্যসহ যারা যারা খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত ছিল তাদের ক্ষমা করা হয়নি এ প্রেক্ষিতে আজকে জামায়াত নেতাদের মধ্যে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা ছিল না এবং মামলা করার উপাদানও পাওয়া যায়নি এখন ৪০ বছর পর তারা মামলা করার জন্য উপাদান খুঁজছেন, লোভ প্রলোভন দেখিয়ে বাদী ও সাক্ষী অনুসন্ধান করছেন, কাগজপত্র পত্রপত্রিকার কাটিং ও নাটক সিনেমা তৈরি করছেন এর চেয়ে হাস্যস্পদ আর কিছু হতে পারে কি?
১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের কালো রাতে যে পাকিস্তান আর্মীর সদস্যরা পিলখানা ও রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্পসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বেসামরিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে হাজার হাজার বাঙ্গালীকে খুন করেছিল, দীর্ঘ নয় মাস পরিকল্পিতভাবে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে শহর নগর ও গ্রামীণ জনপদ ধ্বংস করেছিল এবং লাখ লাখ লোককে শহীদ করেছিল সেই পাকিস্তান আর্মির সদস্য এবং সামরিক শাসকরা যুদ্ধাপরাধের দায়ে কেউই অভিযুক্ত হবেন না সামান্যতম বিবেক যাদের আছে তারা তা মেনে নিতে পারেন না যারা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে দেশবাসীর সামান্যতম খোঁজও নেননি হোটেল বারে স্ফূর্তিতে মশগুল ছিলেন তারা বিচার করবেন তাদের যারা সুখে দুঃখে মানুষের সঙ্গী হয়ে আগ্রাসী শক্তির নির্যাতন থেকে তাদের বাঁচানোর কাজে তৎপর ছিলেন, এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কি হতে পারে বাংলাদেশে এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য হচ্ছে একটি দলের ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে নতি স্বীকার করে দেশটিকে লুটেপুটে খাওয়া এ পথে যারাই কাটা হবেন তাদের উপরই যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অপবাদ আসবে দেশের ১৫ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই প্রবণতা রুখে দাঁড়াতে হবে বলে আমি মনে করি
তাদের বিচার সর্বাগ্রে হবে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ এসব মন্তব্য সর্বত্র বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে বলেই মনে হয় অর্থাৎ যুদ্ধের আইন অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধরত পার্টিগুলো যা ইচ্ছা তা করতে পারে না, ন্যূনতম নীতি নৈতিকতা এবং মানবতার প্রতি তাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হয় Rome Statute এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৮নং অনুচ্ছেদে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত বা গঠিতব্য ট্রাইব্যুনালসমূহকে যে Jurisdiction দেয়া হয়েছে তাতে যুদ্ধরত দেশসমূহের সরকার সশস্ত্র বাহিনী সশস্ত্র সহযোগী সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা (যারা Part of a Plan or Policy or as part of a large scale Commission of sach crimes) যারা উপরোল্লিখিত যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত তাদেরই বিচারের সম্মুখীন করতে পারে

No comments: